Search This Blog

Saturday, December 4, 2010


 বৃষ্টি ডানা

ঝির ঝির বৃষ্টি ।বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মিলেছে ঝিঝির ডাক সেই সঙ্গে তার মনোবিলাস ; কোথাও সমাপতনের মতো করে দু-একটা ইট ধসে পড়ে, দেওয়াল ধ্বসে পড়ে, এ সব কান পেতে শোনা না মনোবিভ্রম ? যা বঙ্কিম ভ্রু উঁচিয়ে দ্যাখে, মাথা নাড়ে, হাতপা নাড়ে তারপর ছায়ার দিকে সরে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ! তোড়া রাত্রে খেতেবসে এ সব ভাবে! একাই খেতে বসে, বাচ্ছাটাকে খাইয়ে দাইয়ে দিয়ে দোলায় শুইয়ে দেয় আগে তারপর সে রান্নাঘরে আসে। তার শ্বশুর মাঝে মাঝে দোলনায় একটু দোল দেয়, শশুড়ি ফিস্ ফিস্ করা কথা বলে –তোড়া রান্না ঘর থেকে আবছা শুনতে পায়—দেওয়ালের গা বেয়ে বেয়ে সে কথারা মাকড়সার মতো চলে বেড়ায়। প্রথম প্রথম তার ভয় করত, পোড়ো বাড়ির মতো বহু পুরানো বাড়ি—গলি ঘুঁজিতে থিক্ থিক্ জমে থাকা অন্ধকার—সেই অন্ধকারে কারা যেন হেঁটে বেড়ায়—এমনো মনে হতো তার, মনের ভিতর কিছু পরস্পর সংলগ্ন ভয়—দশ আঙুল মেলে মাকড়শার জাল বোনে—আর কথার খেই হারিয়ে গেলে শ্বাস বায়ুর অভিঘাতের মতো কথার অভিনয় করে চলে ক্রমাগত যেন আবছায়ার দিকে বসে কেউ খুক্ খুক্ কাশে ! সে বড় বিশ্রী ব্যাপার তখন একা একা খেতে বসা । শ্বশুর-শশুড়ি আগে খেয়ে নেয়—সামান্য যে টুকু তদের আ্হার ; তর অনেক পরে হ্যারিকেনের আলোয় দীর্ঘ ছায়া ফেলে সে যখন রান্না ঘরে আসে তখন গা ছম্ ছম্ করে । মনে হয় লাঠি হারিয়ে কোনো অন্ধ মানুষ যেন অবিরত হাতড়ে বেড়াচ্ছে ।
     কিন্তু এখন আর তেমন মনে হয় না বরং একা খেতে বসা একটা বিলাস—অনেক সময় নিয়ে, চার পাশে যেন অঢেল সময় হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকে ! সে ভাবে আকাশ পাতাল, ঝিঝির ডাক শোনে—শীতকাল বলে দূরে শেয়াল ডাকে, কুয়াশা হাতড়ে হাতড়ে সে ডাক যেন রান্না ঘরের দাওয়ায় এসে থমকে দাঁড়ায়; ভয়ের কথাই তা ! কিন্তু যার ভবিতব্য এভাবেই কোল পেতে বসে থাকে তার একদিন ভায় কাটে বইকি ! তোড়াও এতদিনে এদের সঙ্গে হতে হাত রেখে বসবাস করতে শিখে নিয়েছে !একটা বড় দা সে বাসনকোসনের মতো করে রান্না ঘরের তাকে সাজিয়ে রাখে, সেটা হাতে নিলে তার সারা গা শক্ত হয়ে যায়—বাইরের ঘরের জানালায় অকারনে যখন টোকা মারার শব্দ পায় তখন রান্না ঘরের মৃদু আলোয় তার ছায়া যেন আরো দীর্ঘ হয়ে যায়—নিবিড় অন্ধকারেরও যেন সীমানা ছাড়িয়ে যায়, ছায়ারাও সে সময় কানে ফুসমন্তর দেয়—যে বাড়িতে সমর্থ পুরুষ নেই সে বাড়ির কড়া বাতাসেও নড়ে ।
     তোড়ার কানে এই সকল শব্দ এখন নিমিত্তের মশা মাত্র, তারা ক্ষনিক গুন গুন শব্দ তুলে ফের অন্ধকারের দিকে মিলিয়ে যায়, মিলিয়ে যায় কেননা সে—তোড়া এই সমস্ত শব্দের প্রহার পরিহার করে আজকাল ! সে থাকে আহারের বিলাসে মগ্ন—দীর্ঘ ক্ষন; চর্বিত চর্বন তার নানাবিধ চিন্তা ঘুরে ফিরে নানা দৃষ্টিকোনের অনুপাতে দংশন করে যায় ! তবু সে ভাবনাগুলোকে কোলের কাছে জড়ো করে রাখে যেন এক মমতার খেলা চলে তাদের সাধে তার । পা ছড়িয়ে সে তাদের সঙ্গে বসে—মনে মনে দু-চারটে কথার ফুলকি ওড়ে, বাতাসে ভাসে, রংমশালের মতো কখনো তারা রঙিন, কখনো অন্ধকারে দু-একটা জোনাক জ্বলে—নেভে, অথবা পাশাপাশি তারা বসে থাকে তোড়ার আসে পাশে, কি ভীষন মায়া চিত্রন করে যেন তারা একাকী তোড়ার চারপশে অন্ধকার, চরাচরে !
     রাতের দিকে তোড়া বিশেষ রান্না করেনা—দুপুরের তরকারি গরম করে নেয়; আর দু-মুঠো ভাত নিজের জন্য ফুটিয়ে নেয় !
     ছেলেকে নিয়ে বিছানায় যেতে যেতে তোড়ার সেই রাত এগারোটা ! পুচকেটা ততক্ষনে ঘুমিয়ে কাদা ।
     ছেলেকে বিছানা ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে সে যখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল খুলে বসে তখন এক প্রবল ভার যেন তার সারা শরীরে নেমে আসে ! আবার চারপাশের ভাবনা গুলো প্রসাধনের মতো মাখতে থাকে সারা গায়ে—চুলে বিলি কাটে ।
     সুমিত ঘরে থাকলে সে এভাবে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল খুলে বসেত না—সে পায়চারি করে বেনী রচনা করত হেসে—“আমকে কেমন মানাচ্ছে বলো তো?”—কথায় আহ্লাদ দ্বি-প্রহরের রৌদ্রের মতো আভা দেয়—তার চোখের দ্যুতি প্রহারে অভিসিক্ত করে সুমিতকে ব্যতিব্যস্ত করে। সে সব খেলা বা বাতাসের স্বাভাবিক হিল্লোল—আজ তোড়ার মনে হয় নষ্ট পোকার মতো কুরে কুরে খায় ! কোথায় গাছের গাছের ডানায় মেঘ বৃষ্টি হয়ে মোমের মতো বিগলিত হয়ে নামে ? নামে আজো—তোড়ার বুকের ভিতর নিভৃতে কদাচিসুমিত এসে পড়লে ! কিন্তু এখন তোড়ার সারা গায়ে প্রবল ভার, যেন বর্ষার সমস্ত মেঘ পাহাড়ের মতো তার বুকে এসে জমেছে ।
     চুলে দুবার চিরুনি বুলিয়ে নিয়ে সে বসে ধাকে ঠায়—সেই রাত দুটো আড়াইটে  অবধি, “আয় ঘুম, আয় ঘুম” তার ঘুম আসেনা মোটে—মাধার ভিতর অনবরত  বিন্দু বিন্দু আগুনের স্ফূরন—তার প্রিয় গল্পের বই থেকেও বিরত করে তাকে; সে শরীরের বিপুল ভার নিয়ে উঠতে পারে না—স্থবীরতা তাকে বসিয়ে রাখে !
     কোনো কোনো দিন ছোট জা ফোন করে তাকে রাত্রের দিকে ! আগুনের ছিটে বর্ষায় যেন তার কানে—মাঝে মাজে তার অবাক লাগে—“ওরা ফোন করে কেন?অসময়ের অভিনয়কে কি প্রলম্বিত করার জন্যে?” কিংবা কিছুই না—অনন্য দুঃখের নির্মান সুখ !
     ছোট দেওর বড় অফিসার—সরকারি, তার কলকাতায় বাসাবাড়ি, গাড়ি, ঠাট, জমক অনবরত বিভেদের এক নোঙর সাজিয়ে রাখে—বলে—“তারা সব তোড়ার মাটির থেকে অনেক মাইল দূরে”।
     কখনো সখনো তারা গাড়ি হাঁকিয়ে দেশের বাড়িতে বেড়াতে আসে! যেন চার পাশে লক্ষ করে দেখে আগাছা কতো বড় হয়েছে !
     উপদেশের মতো করে তারা দুঃখ—টঃখ—ছাই—পাঁশ বর্ষন করে যায় !সে সময় শ্বশুর শাশুড়ি পর্ণোমোচী হয়ে যায়—রূপ বদল হয় তাদের হাবে ভাবে।
     সে কয়দিন তোড়ার সবকিছু নিঝুম মনে হয়—মনে হয় কোথাও একাকিত্বের দিকে অন্ধকার গাঢ় হয়ে গিয়েছে, মনে মনে বলে—“ভগবান আছেন , ভগবান আছেন” বাথরুমে যেতেও তার তখন ঘেন্না লাগে—সে বাথরুম তার দেওরের অর্থে বানানো, অথচ সুমিত কে বার বার বলেও “একটা বাথরুম বানিবে দাও, ভালো মন্দ যেমন তেমন”, সুরাহা দূর অস্ত, যেন সে কথা বারংবার দেওয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসে মনোবেদনায় ক্লান্ত; তোড়া যদিও দিনের বেলা বাগানে যায়, কিন্তু রাত্রে সে বাগানে যেতে পারে না, ভুতের এক অলীক ভয়, বিছানায় কাঠ হয়ে সে পড়ে থাকে—ঘরের বাথরুমেও যায় না।
     সুমিত কারখানায় কাজ কারে, ছোট মোট কাজ, আসলে তার কাজের ইচ্চেটাই কম, শুধু তার বড় বড় কাথার ফানুস, তাইতেই সে আকাশে ভাসে—অন্যায় তর্কের প্রাচীর তুলে চোখ লাল, মুখ ভঙ্গিল, খাঁ খাঁ মাঠে রৌদ্দুরের প্রদাহের মতো তার কথা অসহ্য ! তোড়া তর্ক করে না, অবস্য তর্কের অভিলাষ তার কোনদিনই ছিল না, ছোট থেকেই সে শান্ত “বুক ফাটে তো মুখ ফোতে না” যদিও তার ভাবনা বা সিদ্ধান্ত অটল তাতেই চিরটাকাল সে একটা একলাটে, মেলামেশায় সে বসে বসে কথা শোনে, ঠোটের কোনে কোনে হাসে; এটুকুই, ভিতরের কথা তার বাইরে আসে না !
     বিয়েটা তাদের দেখাশুনা করেই, সুমিতও দেখতে গিয়েছিল, তার সম্মতিক্রমেই বিবাহ; তবু ফুলশয্যার প্রথম নৈকট্যে তোড়া বোধ হয় বুঝেছিল সুমিতের মনে কোথাও একটা অপচ্ছন্দের কাঁটা রয়ে গেছে ! আসলে সুমিতের পছন্দতাই কিংবা পছন্দ অপছন্দের বোধ বুদবুদের মতো, রোদে রামধনু রচনা করে নিমেশে ফুড়ু! সেই থেকেই তোড়া যেন এক কাঁটার ঝোপ সর্বদা কোলের কাছে নিয়ে ঘর করে—বসবাস করে ।ঘরের ভিতরে তার আগাছা বাড়ে কাঁটাঝোপের , বাইরে থাকে অলীক দেওয়াল।
আগাছা সব সুমিতের খেয়াল, বাদবিচার, তোড়া সেই খেয়ালের ঘুড়ির সাথে লেজের মতো জড়িয়ে মড়িয়ে একসা ।
     সুমিত আসলে তার মায়ের মতো, তোড়ার শাশুড়ি কথা বলে বেশ, কিন্তু কথার ভিতর হুল, হুলে বিষ জ্বালা !
     তোড়ার সবই আস্তে আস্তে থিতিয়ে যেতো , সয়ে যেতো হয়ত, পুচকেটা আসার পরে! তোড়া তেমনই আশার স্বপ্নে মগ্ন ছিল ! কিন্তু কোথা থেকে মাঝে মাঝে কিছু উড়ো হাওয়া এসে সে মগ্নতা কাচের মতো ভেঙে দিয়ে যায় ! তোড়া নড়ে চড়ে বসার অবসর পায় না, তার সারা দে্হ পাথরের মতো ভারি হয়ে যায় ।
     তোড়া তার সুদীর্ঘ চুলের ছায়া আয়নায়—অন্ধকারের আবছায়ায় প্রতিফলিত হতে দেখে ক্ষনিক শান্তি পায়—এই চুল খুলে আয়নার সামনে বসা—এ এক বিলাস তার, সেই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে; যবে থেকে সে আয়নাকে বুঝতে শিখেছে, বুঝতে শিখেছে তার টিকালো নাসা, মুখের লাবন্য ও দীর্ঘ চুলের বিন্যাস , সেই উড়ো মেঘের বয়স থেকেই তার পড়াশুনা ছেড়ে আয়নার সামনে বসে থাকা এক আহ্লাদ, তবু তোড়া সুন্দরী নয় প্রকৃত অর্থে, তা হলেও এক লাবন্যের দ্যুতি প্রতিমার মুকে গর্জন তেলের মতো করে মাখানো—চোখে পড়ে , একটু মনোযোগে তাকালেই হল ! তোড়া সুমিতের চোখে সে মনোযোজ দেখে না !
     আজ সেই চুলও তার মনোবেদনার সঙ্গে মিশে ম্লান—প্রানহীন! খুব উঠে যাচ্ছে ইদানীং ! সুমিতকে সে বলেছে “জানো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, চুল উঠছে খুব!” সুমিত আজ নয়, কাল নয় করে হাওয়ায় ভাসিবে রেখেছে সবকিছু ।
     ইদানীং শুনেছে সুমিত কারখানার কাজ ও ছেড়েছে, ছেড়ে কি করছে তোড়া তা জানে না—তোড়াকে সে কিছু জানায়নি, জানাবার কোনো প্রয়োজন সে তার কথাতে হাসিতে প্রাকাশ করার অভিলাষ জ্ঞাপন করেনি, সুমিত নিজের ভিতরেই নিজে চিত্রিত করে নিয়েছে নিজের দিনযাপন ।
তোড়া এখন তার চোখের কাঁকর, অনবরত কর্ কর্ করে; অবিরত বিদ্বেষ ঢেলে চলে, তার ব্যবহারে; তোড়ার মনে হয় শুধু চোরের মতো সর্বদা অস্থির, চঞ্চল, মাছির মতো উড়ে উড়ে শুধু বিরক্ত করে।
পুচকেটাকেও কাছে টানে না, তোড়ার কোনো গভীর আকুতি “ওগো ছেলেকে দ্যাখো” যেন বন্ধ দেওয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে ফিরে আসে! অথচ তোড়ার শরীরে গোপন ভাঁজ—গভীর অন্দরের ভিতর সেঁদিয়ে যেতে সুমিতের উল্লাস বাধাহীন, তা কাঠ ঠোকরার মতো আহ্লাদে ঠুকরে যায়, আসলে চিরদিনই শরীরে তার অভিনিবেশ, তোড়ার শরীরও শুধু সেই পারস্পরিক প্রয়োজনের ভাস্কর্য যদিও তা শিল্পির কিংবা নির্মানের নয়, ভাঙনের; তোড়ার কোনো “এখন নয়” শোনে না, নদীর মতো এক পাড় ভাঙে, তোড়া তলিয়ে যেতে যেতে অভিমানের হিক্কার তোলে—“নাও, খাও খাও”!
     তোড়ার ভয় ছিল মাসের ঠিক সময় নয় সেটা; সেই বাসাবাঁধা ভয় একদিন প্রবল মনে হল,পিরিয়ড পিছিয়ে যেতে! তোড়া সে ভয়ের কথা কাকে বলবে?আসলে সুমিত আর চায় না, তাই ভয়! তাই ভয় ফনিমনসার ঝোপের ভিতর আটকে থাকার মতো শত্রুতা; এ ভাবে এই ভয়ের খেউড় শুনতে শুনতে দিন পেরিয়ে যায় বেশ কিছু।
শেষে যখন শরিরের ভিতর এক নদীর কল্ কল্ প্রবাহ—হাসি টের পায় তোড়া তখন সে সুমিত কে বলে;
সুমিতের এতো রাগ কখনো দেখেনি সে। সুমিত অনবরত ঝড়ের মতো ভেঙে পড়ে যেন তোড়ার উপর; সেই প্রথম সুমিত তোড়ার গায়ে হত তোলে।
     সুমিত ডাক্তারের কাছে যেতে চায়, কিন্তু তোড়া রাজি নয়, সুমিত মারধোর করে, রাগ করে, কিন্তু তোড়া অনড়; সে আরো বাঁধনে জড়াতে চায় সুমিতকে!কোথায় যাবে সে তোড়ার হাত ছাড়িয়ে? তোড়া তা হতে দিতে পারে না, যতই অধিকারের দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়ুক; আর একটা প্রান স্পন্দন দিয়ে সে নিশ্চই সুমিতকে আগলে রাখতে পারবে! তাছাড়া কোথায় যাবে তোড়া?বাবার অবস্থা তেমন ভালো না—দুটো বোন আছে; তোড়াকে তাই এখানেই থাকতে হবে, ভালোবাসার নাম করে মিথ্যেকে বাঁচিবে রাখতে হবে ! তোড়া সেই স্বপ্নের আশায় থাকে—কখনো ভয় মাতব্বরি করে,তাসের ঘরের মতো ভেঙে দিতে চায় সবকিছু—সেই মাতব্বর ভয়ই ফুসমন্তর দেয় “তুমি না পেলে কিছু, সুমিতও কেন কিছু পাবে?”
     সেই ভয়ই এখন আয়নার সামনে বসে অন্ধকারে অভয় দেয়, আস্কারা দেয় তোড়াকে, পাথরের মতো চাপ চাপ সে আস্কারা—“সুমিত কিছু পাবে না, না পেলে.....”!
     তোড়া মুচকি মুচকি হাসে, তখন তার চুলে মুখের এক পাশে জানালা দিয়ে চাঁদের আলোর একটা টুকরো এসে পড়েছে!মেঘর ফাঁক দিয়ে একটুখানি ভাঙা চাঁদ—এখনি হয়ত মেঘে ঢেকে যাবে, বৃষ্টি নামবে, বৃষ্টি নামলে তোড়া গাছেদের পাহারা বাঁচিয়ে পরকীয়ায় মাতবে—সে ও তার মেঘ, তার দু হাতে বৃষ্টি ডানা , তোড়া আবার হাসে, শব্দ করে হাসে “পরকীয়াতে দোষ আর কি? সুমিত করছে যখন”! খবরটা কানাঘুষোয় শুনেছিল, আজ ভালো লোকের কাছ থেকেই খবর পেয়েছে, সুমিত আবার বিয়ে করতে চায় !ছোট জা ফোনে হাসতে হাসতে বল্ল “মরন, গলায় দড়ি জোটে না!”
     তোড়া আবার একটু হাসে, আয়নাতে নিজেকে এলো চুলে দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়, চোক ফেরাতে পারে না! তোড়া আয়নার ভিতর এক অচেনা মেয়ের প্রচ্ছায়া খুঁজতে খুঁজতে হাঁপিয়ে মরে, সুমিতের সঙ্গে তাকে কেমন মানাবে?
     হাসতে হাসতে বলে “কেমন?”
ভিতর থেকে মাতব্বর ভায় বলে “সুমিত কে যেতে দেবে?”
তোড়া মনে মনে বলে “যাক্” , এই বলে সে ভয়কেও মুক্তি দেয় তার ভিতর থেকে !
     সে নীচে থেকে শ্বশুরের ঘুমের বড়ির শিশিটা এনে রেখেছে, ভেবেছিল কাল সুমিত আসবে, তখন তোড়া দেখবে সে কি করে যায় তোড়ার হআত ছাড়িয়ে!
     তোড়ার একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে ! তার মেঘ আছে, দুই ডানা বৃষ্টি আছে, সে বৃষ্টি হয়ে ঠিক মেঘেদের ভিতর ঢুকে যাবে; ভাবতে ভাবতেই তোড়ার গায়ে কাঁটা দেয়, তা কি আনন্দ না বিষাদ ! তোড়া পুচকেটাকে মগ্ন হয়ে দেখতে দেখতে, আরো অনেক্ষন দেখতে দেখতে, আকাশ পাতাল ভাবে, ভাবতে ভাবতে আলগোছে শিশিটার দিকে হাত বাড়ায় !
     বাইরে তখন দু চার ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়েছে ।

                          
                          ----শেষ----

No comments: