Search This Blog

Tuesday, August 17, 2010

ঘুড়ি

সুচাঁদের ‘আকাশযাত্রা’ বলে আমরা খ্যাক খ্যাক করে হাসির লহর তুলি,বিকেলে বন্ধুরা মিলে—আসলে তা ঘুড়ি, মাঠ ময়দান উথাল পাথাল করে—সারা আকাশ জুড়ে ঘুড়ি ভাসে তার চোখে—সুচাঁদের এই বারমুখো হৈ হৈ আকাশ যাত্রা আসলে খেলা, সেই হেতু আমারও অনেক ঘোরা হয়েছে মাঠের আলে আলে,যদিও তারা তেঁতুলে বাগদি—তবু বাড়ির নজর এড়িয়ে আমিও ঘুরেছি।
আমার দাদুর কিছু বাতুলতা—“ছোটলোকদের সঙ্গে মেলামেশা করে তুমিও তাদের মতো হয়ে যাচ্ছ”—ভিন্ন অন্য ভয় নেই মাঠে—দৌড় দৌড়—ঘুড়ি কাটা কাটি খেলা—তেতুলে বাগদির ছেলে সুচাঁদের মাঞ্জা কলকে পায়নি কখনো—আমাদের দামি মাঞ্জার কছে তবু মাঠে মাঠে সেই দৌড়ায় বেশী—তার আঁকশি মনে হতো আকাশ ছুঁয়ে যাবে—তার কালো কুৎসিত শরীর সূচের মতো তীখ্ন দৌড়দিত—দিতে দিতে দৌড় সে কোথায় হারিবে গেল একদিন—সে সব মনে পড়েনি কোনদিনও—পড়তোওনা কোনদিন—গড়ের মাঠে না দেখলে—যদিও অস্বীকারই করার মতো তার চেহারা তবু আমি আর মানষী গড়ের মাঠের ছায়ার আড়ালে ট্যাক্সিতে—ড্রাইভারকে বাইরে পাঠিয়ে সবে ঘনিষ্ঠ হতে গেছি—কাচে টোকা শুনে মুখদিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে গেলো—“কোন হারামজাদারে?”অথচ তাকাতেই আমি ভেড়া হয়ে যাই !শুনেছিলাম কোন এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে শ্লীলতাহানির কেসে সুচাঁদ জেলে গিয়ে ছিল অথচ আমি সেই সুচাঁদের মুখো মুখি হয়ে কুঁকড়ে যাই—চমকাই !সে কিন্তু চমকায়না—তার চোখ মুখ ভাবলেশহীনতায় মসৃন—কুৎসিত ছোপধরা দাঁত বিভঙ্গে মেলে ধরে সে বলে—“বাবু ঘুড়ি নেবেন?”—ময়দানের মাঠে ঘুড়ি ফেরি করতে আমি কাউকে দেখিনি—অথচ আমার মনে হল এখনই ঘুড়ি ফেরির সময়—যেন কলকাতার আকাশের সমস্ত কাক, চিল একলহমায় ঘুড়ি হয়ে গিয়েছে—আমি ও সুচাঁদ দুটি প্রতিপক্ষ ঘুড়ি—পরস্পর জড়িয়ে গিয়ে খোলা আকাশে গোঁত্তা খাচ্ছি—আমার দীর্ঘ লেজ ধরে মানষী ভাসে—তার আলুথালু শাড়ী অনাবিল হাওয়ায় পত্ পত্ করে ওড়ে পতাকার মতো—আথচ মানষী আমার প্রেমিকা নয়—সে যে আমার কি সেটা না জেনেও আমি তার সঙ্গে ময়দানে আসি, সিনেমায় যাই।
সুচাঁদ চলে যেতে আমি মানষীকে প্রায় রেপ করি—মাথার ভিতর কারা যেন হৈ হৈ করে তখন—“ধর ধর শালাকে—বাগদির বাচ্ছা ঘুড়ি নিয়ে পালাল রে—আঁকড়ো দিয়ে মার”—আমি তখন খজেুর ঝোপে পড়ে গেছি—দু-হাতে বিন্দু বিন্দু কাঁটার মতো রক্ত ফুটে উঠতে থাকে—হঠাৎ মনে হয় সব যন্ত্রনা কাচের মতো ঝন ঝন করে ভেঙে পড়ে—দেখা যায় নির্জন পুকুর ঘাটে—“টুলু স্নান করে”—কি যে হয় মানুষের কখনো সখনো—বড় মানুষের ছায়া এত ছোট!—আমার ঘুড়ি কোথায় ভেসে চলে যায়।
একটা পেট কাঠি কিনে আনি সেদিন—আমি আর মানষী সারারাত ধরে ঘুড়ি ওড়াই ছাদে—সেই প্রথম মানষী আমার ফ্ল্যাটে আসে—আলনায় তার শাড়ী রাখে—চিরুনীতে রাখে তার লম্বা চুল!